শীতকালে কেন ঠান্ডা লাগে-
আচ্ছা, শীতকালে ঠান্ডা আর গ্রীষ্মে গরম কেন? মনে হতে পারে আবার প্রশ্ন, উত্তর সোজা!
কেউ হয়তো উত্তরটা এভাবেই তৈরি করেছেন- ‘গ্রীষ্মকালে পৃথিবী সূর্যের কাছাকাছি, এত গরম; আর শীতকালে তো দূরের কথা, তাই তখন ঠান্ডা। ‘আবার কেউ মজা করে বলবে- তাই শীতে এর শক্তি একটু কম। কিন্তু গরমে খুব রেগে যায়! ‘
কিন্তু সত্য হল, এই সহজ প্রশ্নটিরও একটি চমৎকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক-
আমরা জানি যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘোরে। এই ঘূর্ণনের সময় পৃথিবী সূর্যের দিকে কিছুটা হেলে পড়ে। পৃথিবীও তার নিজের অক্ষে ঘোরে, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময়ে সূর্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
এভাবে পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধ কখনো সূর্যের কাছাকাছি চলে যায় আবার কখনো উত্তর গোলার্ধের। যখন সেই অংশটি সূর্যের দিকে কাত হয়, সেই অংশটি দীর্ঘ সময় ধরে সূর্যের আলো এবং তাপ পায়। এবং তারপর সেই অংশটি আরও গরম হয়ে যায়। এটি গ্রীষ্মের সময়।
একটি অংশ সূর্যের কাছাকাছি থাকা মানে অন্য অংশ সূর্য থেকে দূরে থাকবে। আর দূরে থাকলে সেই অংশ কম আলো ও তাপ পাবে। তারপর ওই অংশে শীত।
একটা উদাহরণ দেই- বাংলাদেশে যখন গ্রীষ্ম হয়, অস্ট্রেলিয়ায় তখন শীত। আবার গ্রীষ্মকালে আমাদের শীতকাল। কারণ অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ গোলার্ধের একটি দেশ এবং বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধের একটি দেশ।
আরেকটি বিষয় হল গ্রীষ্মকালে সূর্যের আলো পৃথিবীর ওই অংশে উল্লম্বভাবে পড়ে, যাতে আলো চারদিকে খুব বেশি ছড়ায় না। এটি পৃথিবীর পৃষ্ঠে একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পড়া তাপের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। ফলস্বরূপ, পৃষ্ঠটি দীর্ঘ সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়। আর গ্রীষ্মে দিন বড় এবং রাত ছোট। তাই গরমে তাপের পরিমাণ বেড়ে যায়।
শীতকালে ঠিক উল্টোটা ঘটে। তারপর পৃথিবীর ওই অংশে সূর্যের আলো বাঁকা বা তির্যকভাবে পড়ে এবং এই আলোও চারদিকে আরও ছড়িয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে পড়া তাপ শক্তির পরিমাণ গ্রীষ্মের তুলনায় অনেক কম। আর শীতকালে দিন ছোট এবং রাত দীর্ঘ হয়। তাই শীতকালে আমাদের ঠান্ডা লাগে।
আরেকটি বিষয় হল মানুষ উষ্ণ রক্তের প্রাণী। কারণ তার শরীর সবসময় তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের শরীরের তাপমাত্রা সবসময় একটু বেশি থাকে। কিন্তু শীতকালে আমাদের শরীর অনেক তাপ হারায়, ঠান্ডা লাগে বলে আমরা এই ক্ষতি অনুভব করি।